ইএফটি সমস্যার সমাধান-একদিনে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর ও একমিনিটেই লেনদেন

ইএফটি সমস্যার সমাধান-একদিনে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর ও একমিনিটেই লেনদেন

ইএফটি সমস্যার সমাধান-একদিনে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর ও একমিনিটেই লেনদেন


ইএফটি সমস্যার সমাধান-একদিনে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর ও একমিনিটেই লেনদেন করা যাবে এখন থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি সমস্যার সমাধান হওয়ায় চেক ক্লিয়ারিং করতে পারছে ব্যাংকগুলো।



একই সঙ্গে ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও লেনদেন করা যাচ্ছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, “১৩ এপ্রিলের পর থেকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে চেক ক্লিয়ারিং, আরটিজিএস ও বিইএফটিএন করতে সমস্যা হচ্ছিল।


বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটিতে একটু টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছিল। এই সমস্যা আজকে সমাধান হয়ে গেছে। আইটি বিভাগ আমাকে জানিয়েছে এখন ব্যাংকগুলো সব সেবা ব্যবহার করতে পারবে।”


করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার সামাল দিতে সর্বাত্মক বিধিনিষেধের মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে।
চেক ক্লিয়ারিং ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের সেবা বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন গ্রাহকদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।


বিশেষ করে যারা অনলাইনে তহবিল স্থান্তান্তর সেবা বেশি ব্যবহার করতেন তারা মঙ্গলবারের পর থেকে তা পারছিলেন না।
রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) হলো একটি তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা, যেটির মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক সময়ে তহবিল স্থানান্তর করা যায়।


বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর গ্রাহক ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থাৎ অনলাইন মাধ্যমে নিজের একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে কিংবা অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের একাউন্টে বা কার্ডে টাকা লেনদেন করতে পারেন।


ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, “রোববার সকাল থেকে চেক ক্লিয়ারিং, আরটিজিএস হচ্ছিল।

পরে বিইএফটিএন চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সব ঠিক মত করা যাচ্ছে।” ব্যাংকগুলো ১৩ এপ্রিল থেকে চেক ক্লিয়ারিং, আরটিজিএস ও বিইএফটিএন সেবা দিতে পারছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফাইবার অপটিক সমস্যার কারণে সার্ভারে যুক্ত হওয়া সম্ভব না হওয়ায় এসব সেবা বন্ধ ছিল।



একদিনেই ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরঃ-

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর আরও আধুনিক করা হয়েছে। এখন আন্ত:ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর হচ্ছে মাত্র দিনে দিনেই।
অর্থাৎ এখন থেকে যে কোনও ব্যাংকের চেক যে কোনও ব্যাংকে জমা দেওয়ার দিনই টাকা পাবেন গ্রাহকরা।

ইতিপুর্বে যে দিন চেক জমা দেওয়া হতো তার পরের দিন টাকা স্থানান্তর হতো। এখন এই ব্যবস্থার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার  আট হাজার ৮০ কোটি টাকা স্থানান্তর হয়েছে।






ইএফটি সমস্যার সমাধান-একদিনে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর ও একমিনিটেই লেনদেন

বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়ে বলেছে, চেক ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দেশের আন্তঃব্যাংক লেনদেন গতিশীল, ঝুঁকিমুক্ত ও এর পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজের আধুনিক সংস্করণের কার্যক্রম সফলতার সাথে শুরু হয়েছে।




নতুন এ সংস্করণে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার দিনে দুবার নিষ্পত্তি করা হবে। ফলে এর মাধ্যমে পরিশোধিত বেতন ভাতাদি, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রদত্ত ভাতাদি, ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট, বিল ও অন্যান্য পরিশোধ একই দিনে প্রাপকের হিসাবে জমা হবে।


“যা দেশের আর্থিক লেনদেন ত্বরান্বিত করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন চালু হওয়া এই ব্যবস্থায় প্রথমদিনেই  ৬৫ হাজার ৭৩৬ টি চেকের নিস্পত্তি হয়েছে।

তাছাড়া ৬০ হাজারের বেশি  ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) লেনদেন হয়েছে। সবমিলিয়ে আট হাজার ৮০ কোটি টাকা স্থানান্তর হয়েছে







আন্তঃব্যাংক লেনদেন এক মিনিটেইঃ-

এখন থেকে এক মিনিটেই সম্পন্ন হবে এক লাখ বা তার বেশি অঙ্কের টাকার যে কোনো চেকের আন্তঃব্যাংক লেনদেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) নামের নিকাশ ব্যবস্থা চালু করায় আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্রক্রিয়ায় এ গতি এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান দেশের নিকাশ ব্যবস্থার এই নতুন সংস্করণ উদ্বোধন করেন।

প্রাথমিকভাবে দেশের ৫৫টি ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার শাখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই ব্যবস্থায়, যাতে স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি পাঁচটি বিদেশি মুদ্রার লেনদেনও হবে। শুধুমাত্র রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এই ব্যবস্থার আওতার বাইরে রয়েছে।

তার আগে বাংলাদেশ অটোমেটেটেড ক্লিয়ারিং হাউজের (বিএসিএইচ-ব্যাচ) আওতায় এক লাখ বা তার বেশি অঙ্কের টাকার চেকের আন্তঃব্যাংক লেনদেন হতে কমপক্ষে একদিন সময় লাগত।

ক্লিয়ারিং হাউজে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের চেক সকালে জমা দিলে ওই চেকের অর্থ জমাকারী ব্যাংকের হিসাবে আসতে বিকাল হয়ে যেত।

আর বিকালে জমা দিলে পর দিন দুপুর পর‌্যন্ত লেগে যেত। আরটিজিএস চালু হওয়ায় এখন জমাকারী ব্যাংক চেকের ইমেজ কপি জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ প্রদানকারী ব্যাংকের হিসাব থেকে সরাসরি জমাকারী ব্যাংকের হিসাবে অর্থ চলে আসবে।

এর আগে ব্যাচের মাধ্যমে দুধরনের চেকের নিকাশ ব্যবস্থা চালু ছিল;
রেগুলার ভ্যালু চেক, যার পরিমাণ ৫ লাখ টাকার কম এবং
হাই ভ্যালু চেক, যার পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাচের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার রেগুলার ভ্যালু চেক এবং দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার হাই ভ্যালু চেকের লেনদেন হয়।  

আরটিজিএস চালু হওয়ায় এখন থেকে এক লাখ টাকার চেকও হাই ভ্যালু চেক হিসেবে বিবেচিত হবে।
আধুনিক লেনদেন ব্যবস্থা স্থাপনে বাংলাদেশ ব্যাংককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।  

এডিবি ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ডলার অনুদান দেয়।

২০১৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত হয়েছিলো চুক্তিতে। উদ্বোধনী বক্তৃতায় গভর্নর বলেন, “আরটিজিএস চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের লেনেদেন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেল।

এতেকরে লেনদেন প্রক্রিয়া যেমন দ্রুত হবে, তেমনি স্বচ্ছও হবে।” এই ব্যবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সবচে উপকৃত হবেন ব্যবসায়ীরা। আর ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনাও নতুন মাত্রা পাবে।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা, নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে শামসী তাবরেজ, আরটিজিএস ব্যবস্থার সলিউশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিএমএ স্মল সিস্টেম এবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলেক্সি নাজারভ বক্তব্য রাখেন।

বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ক্লিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন