দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস শুরু |
প্রথমে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে এবং অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস চলবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রথমে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে।
অন্যান্য শ্রেণীর ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হবে। এসব শিক্ষার্থীরা সারা সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। পরের সপ্তাহে আবার এসে পড়া দেবে ও নেবে। এভাবে সপ্তাহে তারা বিদ্যালয়ে এক দিন আসবে।
গতকাল জাতীয় সংসদে স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত ইন্টারমিডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এমিডমেন্ট বিল নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রচুর। সেজন্য গাদাগাদি করে শ্রেণীকক্ষে তাদের বসাতে হয়।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনার সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, যদি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা হয় তাহলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের তিনমাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চারমাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।
ইতিপুর্বে সিলেবাসও প্রণয়ন করেছে এনসিটিবি। শিগগিরই সেগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। এ বছর যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তারা এক বছর সরাসরি ক্লাস করতে পারেনি। অনেকে অনলাইন ও টিভিতে ক্লাস করেছে। একেবারেই ক্লাস করেনি কিছু শিক্ষার্থী।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাছাড়া তারা নিয়মিত করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশে সংসদে বিল পাসঃ-
এদিকে সংসদে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ সংক্রান্ত বিল পাসের বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
উত্থাপিত বিলের উপর সংসদ সদস্যদের মতামত চান স্পিকার শিরিন শারমিন। সেখানে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে অধিকাংশ সদস্য বিলটি পাসের পক্ষে মত দেন।
সংসদে শিক্ষামন্ত্রী |
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিলটি পাসের পর প্রজ্ঞাপন করতে দুই দিন সময় লাগবে। এরপরই আমরা দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করব।
পুর্বের আইন অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু এখনকার সংশোধিত বিলে পরীক্ষা ছাড়াই বিশেষ পরিস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও সনদ দেবার সুযোগ দিয়ে তিনটি বিল পাস হয়।
বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে।
যে কোন দিন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জাতীয় সংসদ বিল পাসের পর শিক্ষামন্ত্রী ডঃ দীপু মনি বলেছেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
এবিষয়ে অতিদ্রুত গেজেট প্রকাশের পর ফলাফল দেওয়া হবে। সংসদে তিনটি বিল পাশ হয়।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী |
এই তিনটি বিলে যা আছে- ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০২১, ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১-১৮(২) এর উপধারায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
২০২০ সালে মহামারী কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি । ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মহামারী, দৈব দুর্বিপাক এর কারণে সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত কোন অনিবার্য পরিস্থিতিতে পরীক্ষাগ্রহণ ব্যতীত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও সনদ প্রদান করা যাবে।
বিলের উদ্দেশ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৬১ সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২০ এর খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে ১১ জানুয়ারি তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক খসড়া আকারে প্রকাশ করে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে অনেক বেশি মৃত্যুর হার। সেই তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যু অনেক কম। এইটা আল্লাহর রহমত ও প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা। শুরু থেকেই এসব বিষয়গুলোর দিকে নজর রেখে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা এগুচ্ছি।
সেই সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন কোন জায়গায় ক্ষতি হচ্ছে, কোথায় ব্যাহত হচ্ছে আমরা পরের শিক্ষাবর্ষে কীভাবে সেসব ক্ষতি পূরণ করব, সেসব বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে।
এজন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে একটা এসাইনমেন্ট দিয়ে সেই এসাইনমেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করেই আমরা এই শিক্ষাবর্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এই শিক্ষাবর্ষে সেগুলো পুষিয়ে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবো, এসব বিষয় নিয়েই কিন্তু ভাবতে হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এইবছর যাদের পরীক্ষা নিয়ে কথা বলছি তারা কিন্তু ক্লাস করেছিল এবং পরীক্ষার সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েছিল।
কেবল পরীক্ষার আগে করোনা আসায় শুধু পরীক্ষাটা থেমে গেছে। কিন্তু যাদের পরীক্ষা সামনে, এখন তাদের প্রস্তুতির সময়।
তারা তো সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করেনি। তারা অনলাইনে কিংবা টেলিভিশনে ক্লাস করেছে। কেউ কেউ ক্লাসের বাইরেও থেকেছে।
এজন্য এবছর যারা এসএসসি দিবে, তাদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করেছি। সেটা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে।
তার ভিত্তিতে আমরা আশা করছি যে, ফেব্রুয়ারি মাসে যদি আমরা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারি- এর পর যদি পরীক্ষার আগে তিন মাস কিংবা চার মাস যদি ক্লাস করাতে পারি, তাহলে তার ওপরে আমরা পরীক্ষা নিতে পারব।
আবার কেউ কেউ বলছেন কোনো একটা জরিপে দেখলাম যে, শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরে যেতে চায়।
প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অসংখ্য এসএমএস, মেইল সরাসরি আমাদের কাছে আসে। এক্ষেত্রে দেখা যায় উল্টো।
কোন কোন শিক্ষার্থী বলেন- এখন পরীক্ষা দিতে বলবেন না’। এবারের এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাও তারা অনেকে দিতে চায় না!
তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রস্তুতির নির্দেশঃ-
দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে খুলতে পারে।
এ লক্ষ্যে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- স্কুল, কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরযুক্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানানো যাচ্ছে যে, এখন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। আপনারা জানেন যে, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করার জন্য ‘গাইড লাইন’ তৈরি করা হয়েছে।
সকলকে সাথে নিয়ে গাইড লাইন অনুযায়ী আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
যাতে করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়া মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া যায়।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল যৌথসভা হয়।
উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সম্পর্কিত আরো কিছু শিক্ষার খবরঃ-
স্কুল-কলেজের ক্লাস চালুর পরিকল্পনা তৈরি।
এইচএসসি পরীক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যপারে গুজবে কান দিবেন নাঃ শিক্ষা মন্ত্রী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন