ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি বারোমাসি ফল হলো থাই-সেভেন বারোমাসি পেয়ারা। যার পুষ্টিগুনের কথা লিখে শেষ করা যাবে না,সেই ফল কিভাবে ছাদবাগানের টবে চাষাবাদ বা লালন-পালন করবো সে-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি।
আমার বাসার উপরে ছাদে ছোটখাটো কয়েেক প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে একটি বাগান রয়েছে।
এখানে গাছের কলম, গ্রাফটিং সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে গাছের প্রজনন ঘটাই।
যাই হোক ওদিকে না গিয়ে আজকের আলোচনা আরম্ভ করি?
আজ থেকে দেড় বছর পূর্বে ৩০/৪০ সেন্টিমিটার লম্বা মাত্র ১০ টাকা দিয়ে দুটি দেশি পেয়ারার চারা বাজার থেকে কিনে এনে ২৫ লিটার প্লাস্টিক দুটি বাল্টির টবে চারাগুলো প্রতিস্থাপন করি।
টবে চারা প্রতিস্থাপন করা আগে মাটি তৈরি করতে হবে। টবে সাধারন মাটি দিয়ে চারা রোপণ করলে হবে না। টবের জন্য বিশেষ মাটি তৈরি করতে হবে।
টব সংগ্রহ
বাজারে প্লাস্টিকের দোকান থেকে এটি সংগ্রহ করা যাবে বা কিনে নিতে হবে।
২৫/৩০ লিটার কালো রঙের কমদামী বাল্টিগুলোর মুল্য ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
তা কিনে এনে বাল্টির তলায় ঠিক মাঝখানে লোহা গরম করে ১ ইঞ্চি ব্যাসের সমান একটি গোল ছিদ্র করতে হবে।
তাহলে এটি একটি ছাদবাগানের জন্য চারা রোপণের উপযোগী টব হয়ে গেল।
টবের মাটি তৈরি
পেয়ারা গাছের জন্য মাটি তৈরি-
সাধারন মাটি বা দো'আশ----------------------৫০%
এক বছরের পুরানো গোবর---------------------৩০%
অর্গানিক জৈবসার----------------------------------১০%
অর্গানিক এনপিকে সার--------------------------১০%
অর্গানিক জৈবসার ও এনপিকে সার বলতে বাসায় তৈরি করা হয় নিজেই। এসম্পর্কে পরবর্তীতে লেখা যাবে।
উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলো ঐ পরিমান দিয়ে ভালোভাবে মিক্সচার করতে হবে। তাহলে আদর্শ টবের মাটি বা গার্ডেন সয়েল তৈরি হয়ে গেল।
এখন ঐ মাটিগুলো বাল্টিতে বা টবে ঢালবো। তার আগে টবের তলার ছিদ্রতে একটি খোলামকুচি বা ইটের টুকরা এমন ভাবে বসিয়ে দেবো যা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।
তার উপর ইটের খোয়া ও বালির হাফ ইঞ্চি একটি স্তর তৈরি করে তার উপর গার্ডেন সোয়েল দিয়ে টবের মাঝখানে পেয়ারার চারা প্রতিস্থাপন করা হলো।
তারপর একটু পানি দিতে হবে,তা দিলাম।
এই চারা দুটি প্রতিস্থাপন করার মাসখানেক পর দেশি পেয়ারার চারা দুটি যখন সতেজ হয়ে উঠলো।
তখন আমার বাসা থেকে অনতিদূর একটি থাই-৭ বারোমাসি পেয়ারার বাগান আছে। ওখান থেকে কয়েকটি পেয়ারার সায়ন সংগ্রহ করলাম।
একসাথে দুটি দেশি পেয়ারার চারায় ঐ সায়নগুলো দিয়ে কলম করলাম বা গ্রাফটিং করলাম।
একমাস পর কলমগুলো উজ্জীবিত হয়ে উঠল।
তার দুমাস পর নতুন থাই-৭ গ্রাফটিং করা গাছদুটিতে একইসঙ্গে মুকুল আসা শুরু হয়েছিল।
আর তখন থেকে ঐ গাছদুটি অবিরত পেয়ারা ফলন হয়ে চলছে।
যত্ন ও পরিচর্চা
থাই-সেভেন বারোমাসি পেয়ারা গাছের যত্ন অল্প একটু
নিলেই চলে।
প্রতি তিন থেকে চারমাস পরপর টবে গাছের গোড়ার চতুর্দিকে এনপিকে সার প্রয়োগ করতে হয়।
প্রতি মাসে একবার কীটনাশক হিসাবে নীমতেল স্প্রে করতে হয়।
গাছে মুকুল বা পেয়ারা ধরা থাকলে প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাড়ীতে তৈরি নীম তেল স্প্রে করলে ভালো হয়।
আমার ছাদবাগানটি সম্পূর্ণ ক্যামিকেল মুক্ত একটি আদর্শ ছাদবাগান "ভেন্ডাবাড়ী রুফ গার্ডেন"।যেখানে শুধুমাত্র অর্গানিক( বাড়িতে তৈরি)সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়।
যাতে আমার পরিবার ও আত্নীয় স্বজন একদম ফ্রেস ফলমুল খেতে পারে-এটা আমার দৃঢ় সংকল্প।
এভাবে থাই-সেভেন পেয়ারা ছাদবাগানের টবে অথবা বেলকোনিতে অথবা বারান্দায় বা বাড়ীর গেটে দুএকটি থাই-সেভেন বারোমাসি পেয়ারার গাছ থাকলে সারা বছর পেয়ারার চাহিদা মেটানো সম্ভব।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন