বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষকদের শঙ্কা

বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষকদের শঙ্কা


বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষকদের শঙ্কা
এমপিও শিক্ষক ইএফটি



বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কায় রযেছে দেশের বেসরকারি ও  এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারিরা।
কারণ সরকারের পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জানুয়ারী,২০২১ থেকে ইএফটির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন দেয়ার কথা।

ইতিমধ্যে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি অনলাইনে ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়েছে গত মাসেই। সরকারি তথ্যানুযায়ী ফেব্রুয়ারী,২০২১ মাস থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি বেতন পাওয়ার কথা কিন্তু তাও নেই।

আদেশ জারিঃ-

গত ৭ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আদেশ জারি করে বেসরকারি শিক্ষকদের ইএফটি বা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের
মাধ্যমে এমপিওর টাকা নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা
 হয়েছে।

এতে নয় ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে প্রস্তুত থাকতে 
প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া 
হয়েছে।

 সংবাদটি বেশ আনন্দের, কারণ অত্যাধুনিক অর্থ ট্রান্সফার বিষয়টি বিদেশী বা দেশী উন্নত মানের বেসরকারি ব্যাংকে ঘটে থাকে। সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে। 

তবে এর গভীরে যে কত হয়রানি লুকিয়ে আছে তার খবর ভুক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ জানবেন না।

ব্যাংক হয়রানীঃ-

আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় হয়ারনি হয় বিভিন্ন কারণে। একটি হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানি। যারা যে কাজ করেন, তারা সেই বিষয়ের খুঁটিনাটি জানেন, তাদের জানারই কথা। কিন্তু হঠাৎ যারা সেবা পেতে আসেন, তাদের তো সে রকম জানার কথা নয়।

এক্ষেত্রে বেসরকারি বা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো বাস্তবসম্মত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে বলে সেবার মান
 বেশি, হয়রানি অনেক কম কিংবা নেই বললেই 
চলে। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে সেবা দিতে চায়, সেবা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করে।

তারা ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন, তার তালিকা সবসময় ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করে রাখে।

দ্বিতীয়তঃ-

মিডিয়ায় মাঝে মাঝে সেসব ডকুমেন্ট নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে সেবাকারীদের অবগত করার জন্য। অফিসে ঢুকে সবকিছু নির্দিষ্ট জায়গায় লেখা থাকে, যাতে সেবাগ্রহণকারীদের সমস্যা না হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেয়া থাকে 

সেখানে।

তার পরেও অফিস থেকেই নির্ধারিত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যারা এসে আপনাকে বলবে ‘আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’ আপনি যে কাজে এসেছেন, সেটি বললে আপনাকে তারা সব দেখিয়ে দেবেন—কোন ডেস্কে যেতে হবে, কী কী লাগবে। 

যদি কোনো ডকুমেন্ট না থেকে থাকে তাহলে তার বিকল্প কী কিংবা সহজে সেটি কীভাবে করা যাবে, সেটি বলে দেবেন; অর্থাৎ তারা আপনার পাশে আছেন।



অফিস হয়রানীঃ-

 তাছাড়া কর্মকর্তারা নিজেরাও মাঝে মাঝে তাদের রুম থেকে বের হয়ে কাস্টমারদের জিজ্ঞেস করেন কে কী জন্য এসেছেন, কোনো সমস্যা আছে কিনা। একটু ভিড় হলে তাদের লোকদের জিজ্ঞেস করেন, কেন ভিড় হয়েছে।


 সেই অবস্থা যাতে না হয় সেজন্য সবাই তত্পর থাকেন, যাতে সেবাগ্রহণকারীদের সেবা পেতে কোনো সমস্যা না হয়।

আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় এর সবকিছুই 
উল্টো।অনন্য ব্যতিক্রম ছাড়া আপনি আপনার সঠিক কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে পাবেন না। আপনি চাইবেন একটি, আসবে হাজার ধরনের এলোমেলো তথ্য। 

সঠিকভাবে কোনো কিছু লেখা আপনি পাবেন না। বহু কষ্ট করে আপনি কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে এসেছেন, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে, জুতার তলা ক্ষয়
 করে যখন কাঙ্ক্ষিত কর্মকর্তার রুমে ঢুকবেন তখন তার পিয়ন বলবেন, দেখি আপনার কাগজপত্র, তার বিশেষ উদ্দেশ্যে আপনাকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন।


বলবেন আপনার এটা নেই, সেটা নেই, এটি এভাবে কেন ইত্যাদি। আপনি বলবেন, আমি সেই লালমনিরহাট থেকে এসেছি কিংবা পটুয়াখালী থেকে এসেছি, এখন এই কাগজ আনতে আমি আবার সেখানে যাব?



কর্মকর্তারা বোঝার চেষ্টা করেন নাঃ-

বড় বড় কর্মকর্তা কখনো জানতে চান না বা জিজ্ঞেসও করেন না, এত লোকের সমাগম কেন, কী তাদের সমস্যা।


অবস্থা দেখে মনে হয়, তারা যেন চানই যে লোকজন ভিড় করে বিরক্ত হয়ে চলে যাবে, তাতেই তাদের 
সাফল্য, আনন্দ। 

কারণ তারা যে বড় কর্মকর্তা! আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কিন্তু কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি, বেতন যদিও দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। জনগণের সেবা পেতে অর্থের পরিমাণও 
যে বেড়েছে, 

সেটি জানি না রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তারা জানেন কিনা।


সিস্টেমের অভাবঃ-

দ্বিতীয় হয়রানি হয় সিস্টেমের অভাবে, অদক্ষতার কারণে। বেসরকারি বা বিদেশী কোনো অফিসে গেলে একই কাজের জন্য কয়েকটি ডেস্ক/কাউন্টার থাকে। কোনো ডেস্কে সেবাগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেশি হলে যেটিতে কম আছে সেখান থেকে আপনাকে ডাকবে বা তারাই আপনাকে নিয়ে যাবে।



সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এর কোনো বালাই নেই। দশজন লোককে সার্ভিস দিতে একটি ডেস্ক, ২০০ জন লোককে সার্ভিস দিতেও একটি ডেস্ক। ফলে ভিড়,  বিরক্তি,  হয়রানি ও দুর্নীতি তো সেখানে হবেই। 

মনে হয়, ইচ্ছে করেই যেন এসব বাঁধিয়ে রাখা হয়। ২০২১ সালে প্রথম সপ্তাহে গেলাম পাসপোর্ট অফিসে, নিচ থেকে বলা হলো এত নম্বর রুমে যান। 


ভাবখানা এমন যে ওখানে অনেক কর্মকর্তা বসে আছেন, আপনি গেলেই কাজটি করে দেবেন। গিয়ে দেখলাম মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাইন সিঁড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে। শীতের দিনেও গরম। 


ইএফটি ফরম পুরনঃ-

বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি বেতন পেতে  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষকদের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া 
হয়েছে—(১) জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর
 (২) এসএসসি সনদ অনুযায়ী শিক্ষকদের নাম। বলা হয়েছে এক্ষেত্রে শিক্ষা সনদ, এমপিও শিট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বানান একই হতে হবে। এগুলো তো অবশ্যই যুক্তির কথা। 


কিন্তু আমরা জানি, আমাদের দেশের শিক্ষা বোর্ড থেকে দেয়া সার্টিফিকেটগুলো ছিল বাংলায়। যখন শিক্ষকদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া শুরু হলো এবং কম্পিউটারে তথ্য রাখা শুরু হলো তখন বাংলা থেকে ইংরেজি করা নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে। অনেকের নামের আগে মু:/মো:/মোহাম্মদ/মুহম্মদ/মুহাম্মদ থাকে। 

এটি নিয়ে প্রাইভেট ব্যাংকে আমরা দেখেছি তারা 
মূল নামের আগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না, মূল নাম ঠিক আছে কিনা, সেটি দেখে সহজে লেনদেন 
করতে দেয়। 

কিন্তু সরকারি ব্যাংক বা অফিসের নিয়ম তো আলাদা। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যা হয়েছে—কারোর নাম বাংলায় লেখা ছিল খবির। 



অনলাইন হয়রানীঃ-

ইংরেজিতে বোর্ডে হয়তো লিখেছে Khabir, মাউশিতে কম্পিউটারে লিখেছে Khobir. এভাবে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর শিক্ষা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিও শিটে নামের বানানে পার্থক্য রয়েছে। 



অনেকের নামের স্থলে Z-এর পরিবর্তে J হয়ে আছে। কারো আবার G। কারোর ক্ষেত্রে U-এর স্থলে O হয়ে আছে। কারোর আবার I-এর স্থলে E হয়ে আছে। কারোর কারোর শিক্ষা সনদ ও এমপিও শিটে কোনো ভুল না থাকলেও আইডি কার্ডের নামের বানানে এক কিংবা দুই অক্ষরের মিল বা অমিল  আছে। সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষকের ক্ষেত্রে কয়েক লাখেরই এ সমস্যা হবে। 



বেশির ভাগ এমপিও শিটে নামের বানানে ভুল রয়েছে। এমপিওভুক্তির সময় নির্ধারিত ফরমে নামের বাংলা ও ইংরেজি বানান স্পষ্ট করে লিখে দিলেও এমপিও শিটে ইংরেজি বানানটি যে কারণেই হোক  দু-একটি অক্ষর এদিক-সেদিক হয়ে আছে। 



কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, সেটির সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে শিক্ষকদের এমপিওর টাকা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হতো না। এখন মাউশি সেটিকে কীভাবে ম্যানেজ করবে। নামের বানানে কিংবা আলাদা আলাদা ডকুমেন্টে ভিন্ন ভিন্নভাবে লিখিত হওয়ার কারণে পুরো পদ্ধতিতে এক মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে। 


বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি নামক উন্নত পদ্ধতির সেবা থেকে শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ার চিন্তায় অনেকে অস্থির হয়ে আছেন। আমাকে কেউ কেউ ফোন করে তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।

 

শিক্ষকরা বলেছেন, আমরা ‘টাকা দিয়ে এসেছি কিন্তু কাজ হয়নি।’ এখন টাকা কাকে দেন তারা? ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার পর পিয়ন ও কর্মচারীরা যখন দেখেন তখন তারা নিশ্চয়ই তাদের আশ্বাস দেন যে টাকার বিনিময়ে তারা কাজটি করে দেবেন। সেখানে কাজও হয় না, টাকা যায় জলে।


অধিদপ্তর বর্তমান ভাষ্যঃ-

সব তথ্য সঠিক না থাকলে এমপিওর টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হবে না। এসব তথ্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে অনলাইনে সংগ্রহের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ইএমআইএস সেলের লিংকসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। 


এসব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা আশা করব কোনো শিক্ষক যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন এই ইএফটির মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য পেতে। 



মাউশিকে খেয়াল রাখতে হবে যে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশালসংখ্যক শিক্ষকের তথ্য সঠিকভাবে হালনাগাদ করার ক্যাপাসিটি তার আছে কিনা। 


সময় নিয়ে এবং এলাকাভিত্তিক সমাধান করার তারিখ নির্ধারিত করে দিলে শিক্ষকদের হয়রানি অনেকটাই কমবে। বর্তমান পদ্ধতিতে গা-ছাড়া ভাব প্রদর্শন করা হলে হাজার হাজার নয়, এমনকি লাখ লাখ শিক্ষক ইএফটি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।








আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন।






শিক্ষা সম্পর্কে আরো কিছু পোস্টঃ-


এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ইএফটি প্রাথমিক ধারণা ফরম পুরণ ও নির্দেশনা।



এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২০ ফলাফল ও পুনঃমুল্যায়নের আবেন।




দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ও অন্যান্যদের সপ্তাহে একদিন করে  ক্লাস।






উপসংহারঃ-

অবশেষে বলা যায় যে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ইএফটি বেতন কবে নাগাদ তারা হাতে পাবেন,তা বলা মুশকিল।

তবে আশার কথা যে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটিতে যখন বেতন হাতে পাবেন,তখন সব দুঃখ ও হয়রানী ঘুচবে বলে মনে করা যায়।






Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন